বাইতুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসা।



মসজিদুল আকসা।


"আসসালামু আলাইকুম " 

বাইতুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসা কে আমরা একেক জন একেক নামে চিনি। তো আজকে আমরা জানবো সে সম্পর্কে এর ইতিহাস, বর্তমান, ও এর নির্মাণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। 
  • আমরা অনেকেই যে ভুল টা করে থাকি।     
আসলে আমরা অনেকে না জেনে একটি ভুল করি সেটা হলো,, কুব্বাত আস সাখরা কে মসজিদুল আকসা মনে করি। সোনালী রঙের গম্বুজ ওয়ালা যে ভবন টি দেখা যায় সেটাই কুব্বাত আস সাখরা,, আর সিলভার কালার এর যে সিসার তৈরি গম্বুজ ওয়ালা ভবন টি দেখা যায় সেটাই আসলে, মসজিদুল আকসা,, 

এখানে তার চিত্র দেয়া হলো। 


এটা হলো কুব্বাত আস সাখরা।
                                            

এটিই হলো মসজিদুল আকসা।

  • আল আকসা মসজিদ   এর  অবস্থান ও সারসংক্ষেপ । 
                     বাইতুল মুকাদ্দাস কে মুসলমানদের প্রথম কিবলা তা আমরা সবাই জানি। যা বর্তমান ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত। বাইতুল মুকাদ্দাস আসলে, মসজিদুল আকসা নাম টাই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। মক্কা এবং মদিনার পরে  মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র মসজিদ এটি। এই মসজিদের পাশেই একই প্রাঙ্গনে রয়েছে, কুব্বাত আস সাখরা,কুব্বাত আস সিলসিলা,ও কুব্বাত আন নবী, নামক স্থাপনা গুলো। এই পুরো বাউন্ডারি বা স্থান কে বলা হয়ে থাকে, হারাম আল শরিফ। এ যায়গা টির আরেকটি নাম রয়েছে সেটা হলো, টেম্পল মাউন্ট। এই টেম্পল মাউন্ট ইহুদিদের পবিত্র একটি স্থান। 
    
ইতিহাস বিদদের মতে নবী হজরত সুলাইমান( আঃ) যে  উপাসনার স্থান টি বানিয়েছিলেন সেই পুরো স্থান টিই আসলে এই তিনটি স্থাপনার যায়গায় নির্মিত হয়েছিল, যা পরবর্তী তে কোন কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

মুসলমানদের বিশ্বাস এটি নির্মাণ করার পরে হজরত ঈসা ( আঃ) এবং আরও অনেক নবী রাসুল গন এই স্থানকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য ব্যবহার করেছেন।


জেরুজালেম নগরী তে মসজিদুল আকসা ( বায়ে)

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ ( সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পরে, কিবলা পরিবর্তন করার জন্য পবিত্র কোরআনের আয়াত নাজিল হয়। তারপর থেকে মুসলমানদের কিবলা, মসজিদুল আকসা,র পরিবর্তে মক্কা নগরীর, পবিত্র কাবা শরিফ, কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হওয়ার পরে আজও পর্যন্ত তা চালু আছে। 
  •  আয়তন।  
মসজিদ টির দৈর্ঘ্য ২৭২ ফুট আর প্রস্থে ১৮৪ ফুট। মোট গম্বুজ এর সংখ্যা ১২ টি দুটি বড় গম্বুজ আর বাকি দশটি হলো ছোট গম্বুজ। আর ১২১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার রয়েছে। 

  • আল আকসা মসজিদ এর নির্মান এর ইতিহাস।    
হজরত ইব্রাহিম (আঃ) জেরুজালেমেও একটি উপাসনার স্থান প্রতিষ্ঠা করেন। 
হজরত ইব্রাহিম ( আঃ) পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণ করার ৪০ বছর পরে বাইতুল মুকাদ্দাস এর  সম্প্রসারণের কাজ করেন। এটি উপাসনার স্থান হলেও ইব্রাহিম আঃ মক্কায় হজ্ব করতে গিয়েছেন । তার পুত্র হজরত ইসহাক ( আঃ) এখানে উপাসনা করতেন তবে তিনিও তার পিতার মতোই মক্কায় হজ্ব করতে গিয়েছেন। 
হজরত ইব্রাহিম (আঃ) এ মসজিদের নাম বলতেন মসজিদুল আকসা, যার অর্থ হলো দুরবর্তী মসজিদ। 


পরবর্তী সময়ে ইসহাক ( আঃ) এর ছেলে  হজরত  ইয়াকুব ( আঃ)  ইবাদতের এ স্থান কে আরও বর্ধিত করেন। তারপর নবী হজরত সুলাইমান ( আঃ), খ্রীস্টপূর্ব ১০০৪ সালে অসাধারণ স্থাপত্য শৈলীতে মসজিদের সংষ্কার ও শোভাবর্ধন করেন। 
মুসলমানদের বিশ্বাস এই কাজে তিনি জ্বিন জাতিকে ব্যবহার করেছিলেন।

ব্যবিলনের সম্রাট নেবুচ্যাডনেজার ( দ্বিতীয়)  খ্রীস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে,  সুলাইমান ( আঃ)এর তৈরি স্থাপনা গুলো ধ্বংস করে ফেলেন। 

এরপর ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা এ স্থানে তাদের দেবতা জুপিটারের উপাসনার স্থান বানিয়েছিল। 
৩১৫ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টান হওয়া  রোমান সাম্রাজ্য এ স্থান কে  তাদের ময়লা আবর্জনা ফেলার যায়গা বানিয়েছিল, ঐ সময় ইহুদিরা এ স্থান কে  তাদের পবিত্র যায়গা মনে করতো না। 
  • মেরাজ এর ঘটনা।  
 এই মসজিদকে নিয়ে যে ঘটনাটি আমরা সবাই কমবেশি জানি সেটা হলো, 

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ ( সাঃ) মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে দিদার লাভের জন্য, মেরাজ এ গমন করেন, মেরাজে গমন কালে তিনি এই মসজিদুল আকসা য় যাত্রা বিরতি করেন। তারপর এখানে তিনি সকল নবী ও রাসুল গণ এর সাথে নামাজ আদায় করেন, এবং তিনি ই নামাজের ইমামতি করেন। 

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ( রাঃ)এর  যুগে তিনি বর্তমান মসজিদের স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যা পরে আরও সম্প্রসারিত করা হয়।৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে এক ভয়াবহ ভুমিকম্প হওয়ার ফলে মসজিদ টি ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তী তে খলিফা আল মনসুর ( আব্বাসিয় খলিফা) মসজিদ টি পুনঃ নির্মাণ করেন। ১০৩৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ টি আবার ভুমিকম্প হওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তারপর ফাতেমিয় খলিফা, আলি আজ জাহির মসজিদ টি পুনরায় নির্মাণ করেন, সেই মসজিদ টিই আজও পর্যন্ত টিকে আছে, যেটা আমরা বর্তমানে  দেখতে পাই।বিভিন্ন শাসক গন এই মসজিদে বাড়তি অংশ যোগ করেন ও সংস্কার করেন। 

 ক্রুসেডাররা ১০৯৯ সালে জেরুজালেম দখল করার পরে এই মসজিদ কে তারা  রাজপ্রাসাদ  হিসেবে ব্যবহার করে ও কুব্বাত আস সাখরা কে গির্জা হিসেবে ব্যবহার করে। 

অতঃপর  মুসলিম বীর গাজী সালাউদ্দীন আইয়ুবী ক্রুসেডারদের শোচনীয় ভাবে  পরাজিত করার মাধ্যমে জেরুজালেম শত্রু মুক্ত করেন। বাইতুল মুকাদ্দাস কে তিনি আবার আগের রুপে ফিরিয়ে আনেন ও সংস্কার করেন। তারপর যুগে যুগে আরও মুসলিম শাসক গণ আল আকসা মসজিদ এর সংস্কার ও সম্প্রসারিত করেছেন। 

মসজিদ টি বর্তমানে ফিলিস্তিন ও জর্ডান এর ওয়াকফ এর অধিনে পরিচালিত হচ্ছে। 



আজ তাহলে এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন। 

        বিঃদ্রঃ- আমার লেখা এবং তথ্য গুলোতে যদি কোন প্রকার ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে, তবে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, আর অবশ্যই আপনাদের ভালো লাগা, না লাগা , পরামর্শ এবং আমার ভুল গুলো  কমেন্ট করে জানাবেন,, ধন্যবাদ সবাইকে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ